উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলা বর্তমানে নেকড়ের আক্রমণে বিদ্ধস্ত (Wolf Attacks in Uttar Pradesh)। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাতটি শিশু সহ আট জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বন বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নেকড়েরা প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে, এবং হয়ত সেই কারণেই তারা এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাহরাইচের রামুয়াপুর গ্রামের বাসিন্দারা বর্তমানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি খাদে নেকড়ের ছানা দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি ভারী বর্ষণে সেই খাদ প্লাবিত হয়, যা নেকড়ের শাবকদের মারতে পারে বলে ধারণা। গ্রামবাসীদের মতে, এই কারণেই নেকড়েরা প্রতিশোধ নিতে বারবার হামলা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি শাবকগুলির মৃত্যু মানুষের কারণে হয়, তবে নেকড়ের প্রতিশোধ প্রবণতাও বাড়তে পারে।
সূচিপত্র
নেকড়ের আক্রমণে উত্তপ্ত উত্তর প্রদেশ
ইউপি ফরেস্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠক জানিয়েছেন, নেকড়েরা বেশিরভাগ সময়ই কোমল ও নম্র প্রাণী। তবে কেউ যদি তাদের ঘরবাড়ি বা সন্তানদের ক্ষতি করে, তখন তারা মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেয়। বিশেষ করে শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা করে তারা। এই বিষয়টি বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরও বিভ্রান্ত করেছে। নেকড়েরা সাধারণত মানুষের ওপর আক্রমণ করে না, তাই এই আচরণ অস্বাভাবিক বলে ধরা হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেকড়েদের আবাসস্থলের ব্যাঘাত তাদের মানুষ বসতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। বাহরাইচের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর কাছাকাছি নেকড়েরা এখন দেখা যাচ্ছে। নেকড়েরা নিজেদের স্বাভাবিক বাসস্থান হারিয়ে ফেললে, তারা বেঁচে থাকার জন্য নতুন নতুন জায়গা খোঁজে। সম্ভবত এমনই এক পরিস্থিতিতে নেকড়েরা মানুষের ওপর আক্রমণ করছে।
পূর্ববর্তী ঘটনার পুনরাবৃত্তি
উত্তর প্রদেশে নেকড়ের আক্রমণের ঘটনা এই প্রথম নয়। ১৯৯৬ সালে প্রতাপগড়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তখন নেকড়েরা দশটিরও বেশি শিশুকে আক্রমণ করেছিল। পরে জানা গিয়েছিল, কিছু কৃষক একটি অগভীর গুহায় নেকড়ের ছানাদের বাসস্থান ধ্বংস করে। তখনও নেকড়েরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছিল। বর্তমান পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম।
বাহরাইচের গ্রামগুলিতে নেকড়ের আক্রমণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে, ছয়টি মানুষখেকো নেকড়েদের মধ্যে চারটি ধরা পড়েছে। বাকি দুই নেকড়েকে ধরতে ১০ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রথমে নেকড়েদের শান্ত করার চেষ্টা করা হবে। তবে তা সম্ভব না হলে তাদের মেরে ফেলা হবে।
উত্তর প্রদেশের বনমন্ত্রী অরুণ সাক্সেনা জানিয়েছেন, নেকড়েদের ধরতে একটি চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে দুই রেঞ্জারসহ ১০ জনের একটি দলকে নেকড়েদের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসীদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
বাহরাইচের গ্রামগুলিতে বর্তমানে একটি সংকটজনক অবস্থা বিরাজ করছে। সূর্যাস্তের পরে গ্রামের রাস্তাগুলো একেবারে জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে গ্রামবাসীরা লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। নেকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
নেকড়ের আক্রমণের এই ঘটনা মানুষ-প্রকৃতির সংঘাতের একটি উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের কর্মকাণ্ড, যেমন বন ধ্বংস, উন্নয়ন প্রকল্প, এবং কৃষিকাজের সম্প্রসারণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে ধ্বংস করছে। যার ফলে বন্যপ্রাণী মানুষের বসতির দিকে চলে আসছে।
বন সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে বন সংরক্ষণ জরুরি। বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলা হলে, নেকড়েরা মানুষের বসতিতে এসে আক্রমণ করার প্রবণতা কমে যাবে। এই ঘটনার পর বন বিভাগ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
নেকড়েরা সাধারণত মানুষের ওপর হামলা করে না, তবে যখন তারা তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ হারায় এবং খাদ্যের সংকট তৈরি হয়, তখন তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে নেকড়েদের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন এসেছে।
সতর্কতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের রক্ষার জন্য অভিভাবকদের সচেতন করা হয়েছে। বন বিভাগ থেকে স্থানীয় মানুষদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা নেকড়ের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।
এখনও পর্যন্ত বাহরাইচের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। নেকড়ের আক্রমণের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে একথা স্পষ্ট যে, নেকড়ের আক্রমণের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে বন সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর প্রদেশের বাহরাইচে নেকড়ের আক্রমণ একটি ভয়াবহ ঘটনা। এটি শুধুমাত্র একটি প্রাণীর আক্রমণ নয়, বরং মানুষ এবং প্রকৃতির সংঘাতের প্রতিফলন। নেকড়েদের আক্রমণ রোধ করতে হলে বন সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা করতে হবে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের ওয়েবসাইটে অফবিট তথ্য জানতে অফবিট ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।