দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের প্রথম সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর সিটিসেল (CityCell is back again) আবারও মোবাইল বাজারে ফিরছে। তারা তাদের পুরনো গ্রাহকদের জন্য ২৫ পয়সা মিনিট কলরেটসহ আধুনিক সেবা আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিটিসেলের এই পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা অনেক পুরনো গ্রাহকের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে।
সূচিপত্র
সিটিসেল আবারও ফিরছে
সিটিসেলের চিফ স্ট্রেটিজিক অ্যাডভাইজার মেহবুব চৌধুরী জানান, অনেক চ্যালেঞ্জ পার করে তারা আবারও কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও নিয়ম মেনে বিটিআরসির সাথে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করেছে। এবার সিটিসেল তাদের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা করছে এবং উন্নত মানের টেলিকমিউনিকেশন পরিষেবা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে।
২০১৬ সালে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। সেই সময়ে সিটিসেলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থনৈতিক অভিযোগ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে জানানো হয়েছিল যে, লাইসেন্স বাতিলের ফলে তাদের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কর্মচারী বেতন, ঋণ এবং কর সহ সরকারের প্রাপ্য অর্থ বকেয়া রয়ে গিয়েছিল।
বিটিআরসি সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধের সময় জানায়, সিটিসেলের কাছে সরকারের বকেয়া ছিল প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সিটিসেল কিছু পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে। তবে, শেষ পর্যন্ত সিটিসেলের বকেয়া প্রায় ১২৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল, সিটিসেলকে ১০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও, তারা ৮.৮২ মেগাহার্জ পেয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এটি ছিল একটি প্রযুক্তিগত অসামঞ্জস্য।
নতুন করে সিটিসেলের বাজারে ফেরা
সিটিসেল এবার আরও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চায়। প্রতিষ্ঠানটি ফাইভজি সেবা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে চায়। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি টেকনোলজি নিউট্রাল লাইসেন্স চেয়েছে। অর্থাৎ, সিটিসেল ফাইভজি সহ অন্যান্য প্রযুক্তির সুবিধাও দিতে পারবে, যা ভবিষ্যতে তাদের আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সাহায্য করবে।
সিটিসেল তাদের পুরনো ব্র্যান্ড ইমেজ ধরে রাখতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ২৫ পয়সা মিনিট কলরেটের মতো আকর্ষণীয় অফার নিয়ে এসেছে, যা তাদের গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশে কম খরচে মোবাইল সেবা ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী একটি সুযোগ।
সিটিসেলের ইতিহাস
সিটিসেল ছিল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর যারা সিডিএমএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা দিয়েছিল। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড প্রথমে মোবাইল সেবা প্রবর্তন করে এবং ১৯৯০ সালে হাচিসন টেলিকম এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। পরবর্তীতে মালিকানা পরিবর্তনের পর এর নাম হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড এবং ব্র্যান্ড নাম সিটিসেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মোবাইল অপারেটর।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি নতুন লোগো উন্মোচন করে। তখন প্রতিষ্ঠানটি বাজারে টিকে থাকার চেষ্টায় ছিল, কিন্তু সেবা নেটওয়ার্কে সমস্যা ও প্রযুক্তিগত অসুবিধার কারণে তা পূর্ণ সাফল্য পায়নি। ২০১৬ সালে বিটিআরসি কর্তৃক সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিটিআরসি কর্তৃক সিটিসেলের আবেদন পর্যালোচনা
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, সিটিসেলের আবেদনের বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সিটিসেলের নতুন করে ফিরে আসার জন্য অনুমতি পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বাংলাদেশে অনেক পুরনো গ্রাহক এখনও সিটিসেলকে নিয়ে উৎসাহী, এবং তাদের জন্য সিটিসেলের পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা একটি নতুন আশার আলো।
সিটিসেলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সিটিসেলের এ প্রত্যাবর্তন বাজারের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ তাদের কম খরচে কলরেট অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। সিটিসেল ভবিষ্যতে ফাইভজি সেবা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও করছে, যা আধুনিক টেলিকমিউনিকেশন সেবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে সিটিসেলের নতুন উদ্যমে ফিরে আসা অনেকের জন্য ইতিবাচক খবর। তবে সিটিসেলের আর্থিক সমস্যা সমাধান ও প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে। গ্রাহককে আকর্ষণ করতে কম খরচের সেবা তাদের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য whatsupbddesk@gmail.com মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।