ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পেশা। ঘরে বসে আয়, নিজের কাজ নিজে করার সুযোগ, সময়ের সীমাবদ্ধতা না থাকায় পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং তরুণদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। লাখ লাখ তরুণ-তরুণী তাদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের পছন্দের কাজ করে আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন করছে।
তাই এই তরুণদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। তাদের অনেকেই যেমন সাফল্য পাচ্ছেন, ব্যর্থতার তালিকাও কম নয়। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সাফল্যের মুখ দেখেন না অনেকেই। আপনাদের আগেই বলে রাখি ২০২৪ এ এসে ফ্রিল্যান্সিং অনেক দিক দিয়েই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ফ্রিল্যান্সিং কে পার্টটাইম কাজ হিসাবে নিন।
সূচিপত্র
বর্তমানে ফ্রিলান্সিং করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নাকি তা নিয়ে বিস্তারিত
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া মানে শুধু আপনার কাজে ভালো হওয়া নয়। বরং আরও পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে অসম প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে আপনাকে কিছুটা কৌশলী হতে হবে। তবেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা (হোয়াটসআপবিডি) কোন কোন বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখলে ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে পারবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছি।
দক্ষতার ক্ষেত্র নির্বাচন করুন
প্রথমে আপনার বেছে নেওয়া কাজের ক্ষেত্রে আগ্রহ থাকা উচিত। আপনি যদি সেই কাজটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তবেই আপনি সেই কাজে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে ফোকাস করতে পারবেন। অন্যথায় আপনি হোঁচট খাবেন এবং মানসিক অবসাদে ভুগবেন। ধরা যাক আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান কিন্তু আপনি প্রোগ্রামিং এর প্রতি অনিচ্ছুক। যদি এমন হয় তাহলে আপনি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবেন না এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজটি করতে পারবেন না। তাই আপনার আগ্রহ এবং আপনার দক্ষতা ভালভাবে খুঁজুন এবং বুঝুন।
নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
বাস্তবে সকল পেশায় প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রটিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই এই প্রতিযোগিতায় অন্যদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে নিজেকে অন্যদের চেয়ে নিজের কাজটিতে বেশি দক্ষ হতে হবে। আপনি যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করেন ঐ বিষয়ের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো জানার এবং বোঝার চেষ্টা করুন। এবং সবসময় নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করুন। আর সময়ের সাথে কাজে অভিজ্ঞ বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজ কাজে বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। যেমন, ধরুন আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ শুরু করবেন বা করছেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত লেখালেখির মাধ্যমে চেষ্টা করবেন নিজের লেখার ধরনে পরিবর্তন আনার।আপনার লেখার উপস্থাপনাকে সুন্দর ও সাবলীল করার চেষ্টা করবেন। এভাবে নিজের ভিতর থেকে নিজ কাজে দক্ষতা বৃদ্ধির লড়াই চলমান রাখতে হবে।
সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্ট (Soft skills development)
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য নিজের কাজে ভালো দক্ষ হওয়াই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও আপনার নিজের মধ্যে কিছু সফট দক্ষতা বিকাশ করতে হবে যেমন যোগাযোগ, নেটওয়ার্কিং, সময় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এছাড়াও ইংরেজিতে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করা উচিত। একজন ফ্রিল্যান্সারকে কাজ পাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। এবং যেহেতু বেশিরভাগ মার্কেটপ্লেসের ক্লায়েন্ট পশ্চিমা দেশ থেকে তাই ইংরেজি দক্ষতা ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই ইংরেজিতে পারদর্শী হলে একদিনে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগে কোনো অস্বস্তি থাকবে না। একইভাবে সেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আপনার পরবর্তী প্রজেক্ট পাওয়ার পথটি একটু মসৃণ হবে।
নিজের একটি আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরী
অনেক ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেসে যেকোনো কাজের জন্য বিড করে। বিডিংয়ের সময় প্রায় সব ক্রেতাই ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল দেখেন। এবং প্রোফাইল দেখে একজন ক্রেতা মানসিকভাবে তার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেন আপনি কাজের জন্য যোগ্য কিনা বা আপনি সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা। তাই একটি সুন্দর এবং তথ্যপূর্ণ প্রোফাইল হল কাজ পাওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি। আপনি যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন না কেন। আপনার প্রোফাইলকে যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলুন এবং প্রোফাইলে আপনার আগের কাজের নমুনা সহ একটি পোর্টফোলিও যুক্ত করুন। এটি ক্রেতাদের একটি ধারণা দেবে যে আপনি অতীতে কি ধরনের কাজ করেছেন এবং যদি সম্ভব হয় সেই কাজের ৫ স্টার দিয়ে ক্লায়েন্টের ফিডব্যাক রাখুন। এটি আপনার কাজের পরবর্তী ক্রেতাকে আশ্বস্ত করবে। যা আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
সারাক্ষন অনলাইনে থাকা
বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট পশ্চিমা দেশ থেকে হয়ে থাকে। আর এই দেশগুলোর সাথে আমাদের সময়ের পার্থক্য চার থেকে বারো ঘণ্টা। মানে বেশিরভাগ কাজ রাতে আসে। তাই আপনাকে রাতের বেলা বেশিরভাগ সময় অনলাইনে থাকতে হবে। যাতে বায়ার দ্বারা একটি কাজ জমা দেওয়ার সাথে সাথে আপনি আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি ক্লায়েন্টের কাজ জমা দেওয়ার সাথে সাথে আবেদন করেন, তাহলে আপনার ক্রেতার সাথে শীঘ্রই যোগাযোগের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যা অন্যদের তুলনায় আপনার কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
কাজটিতে এপ্লাই করার সময় সচেতনতা
যেকোনো কাজের জন্য আবেদন করার আগে ক্রেতার দেওয়া প্রয়োজনীয়তাগুলি সম্পূর্ণরূপে বুঝে নিন। এবং যদি আপনি মনে করেন যে আপনি সেই প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কাজটি করতে পারবেন তবেই আপনি সেই কাজের জন্য আবেদন করবেন, অন্যথায় করবেন না। কারণ আপনার যদি পুরো কাজ শেষ করার দক্ষতা না থাকে, আপনি যদি কাজটি পেয়েও যান তবে তা আপনার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আর যেকোনো কাজের জন্য আবেদন করার আগে ক্রেতার আগের কাজ সম্পর্কে ধারণা নিন। একদিকে আপনি ক্রেতার পছন্দগুলি বুঝতে পারেন এবং অন্যদিকে মূল্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। আর এতে ইন্টারভিউ চলাকালীন আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
কাজ করতে হবে নিখুঁতভাবে
আপনি যদি কাজ পান তবে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজটি সম্পূর্ন করার চেষ্টা করুন। এবং সর্বোপরি কাজ করার সময় ক্লায়েন্টের দিকনির্দেশ এবং পছন্দগুলি মাথায় রাখুন। সর্বদা নিশ্চিত করুন যে কাজটি ক্লায়েন্টের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুসারে। এবং ডেলিভারি সময় মনোযোগ দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লায়েন্টের কাছে কাজ পৌঁছে দিতে হবে। কাজ করার সময়, ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করার সময় ক্লায়েন্টের সাথে যথাসম্ভব ভাল আচরণ করার চেষ্টা করুন। যাতে ক্লায়েন্ট আপনার কাজের দক্ষতা এবং ভাল যোগাযোগ দক্ষতা দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং আপনাকে পরবর্তী প্রকল্পগুলি দিতে আগ্রহী হয়।
কাজের সংকটকে মোকাবিলা করতে হবে
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আপনি যে পরিমাণ কাজ পাবেন তা নির্দিষ্ট নয়। একটি নির্দিষ্ট মাসে আপনি অনেক কাজ পেতে পারেন আবার দেখা যাবে কয়েক মাসে পর্যাপ্ত কাজ নাও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনি যে প্রকল্পগুলিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারেন সেগুলিতে কাজ করার জন্য সর্বদা যত্ন নিন। নিশ্চিত করুন যে আপনি সেই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে অন্য প্রকল্পে কাজ শুরু করতে পারেন। এবং এই ক্ষেত্রে, আপনাকে একজন ক্লায়েন্টের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। একজন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার পাশাপাশি অন্যান্য ক্লায়েন্টদের সাথেও যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। যাতে আপনি যদি সেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ না পান তবে আপনি অন্য ক্লায়েন্টের জন্য কাজ শুরু করতে পারেন।
গ্রহণ করুন পরিবর্তনকে
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হতে চাইলে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। প্রযুক্তির পরিবর্তন এবং মানুষের পছন্দের পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার কাজের ধরন পরিবর্তন করার মানসিকতা থাকতে হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আপনার কাজে বৈচিত্র্য আনতে হবে। আর নতুন কিছু করে অভিজ্ঞতা বাড়াতেও খেয়াল রাখতে হবে। আপনার সৃজনশীলতা এবং দক্ষতা ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমের সাথে মিলিত হয়ে আপনাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার করে তুলবে। সর্বোপরি আপনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং আপনার উদ্যম আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সাফল্য এনে দেবে। আজকের এই লেখা থেকে আশাকরি অনেকটা অনুপ্রেরণা এবং সঠিক কিছু দিকনির্দেশনা জানতে পারলেন। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে ফ্রিল্যান্সিং করুন দেখবেন সফল হবেন।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।